ঢাকা, মঙ্গলবার   ২২ জুলাই ২০২৫

পিআর পদ্ধতি সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরুপ: তারেক  রহমান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৫৪, ২১ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ২১:৫৭, ২১ জুলাই ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পিআর (প্রতিনিধিত্বমূলক অনুপাতে) নির্বাচন ব্যবস্থার দাবি দেশের বাস্তবতা ও স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী। এতে বিভ্রান্তিমূলক সমাজ সৃষ্টি ও সরকার অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে। 

আজ সোমবার (২১ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত সমাবেশ এবং শহীদ পরিবার ও নির্যাতনের শিকার পেশাজীবীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন তারেক রহমান।

বক্তব্যের শুরুতে উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য দোয়া এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন তিনি বলেন, যারা নিহত হয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর শোক ও দোয়া রইল। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সহায়তার জন্য বলা হয়েছে। চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবসহ অন্যদেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের নেতাদের নিয়ে টিম গঠন করা হয়েছে। আমাদের কর্মীদেরকে স্বেচ্ছায় রক্ত দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। 

এ  সময় তারেক রহমান বলেন, আমরা দেখছি কয়েকটি রাজনৈতিক দল দেশে হঠাৎ করেই পিআর বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি তুলছেন। কিন্তু বাংলাদেশে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রবর্তনের অর্থ কিন্তু রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে বিচ্ছিন্নতবাদ, ফ্যাসিবাদ, চরমপন্থার পথ সুগম করে দেবে। 

তিনি বলেন, দেশের জনগণের ঐক্য চাইলে কোনোভাবেই সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু হওয়া উচিত না। এই ধরনের দাবিকে কোনো দল গণতান্ত্রিক অধিকার বিবেচনা করলেও দেশ ও জনগণের স্বার্থে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ উপযোগী নয় বলেই আমরা মনে করি। কারণ ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানেই কিন্তু সেটি প্রমাণিত হয়েছে। দেশকে তাঁবেদার ও ফ্যাসিবাদমুক্ত রাখতে হলে সবচেয়ে জরুরি হলো জনগণের ঐক্য।

তারেক রহমান বলেন, সংবিধিবদ্ধ বিধিবিধান আর আইনকানুন দিয়ে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারকে আটকানো যায় না। আইন না মানার কারণেই কেউ ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে পারে। এজন্য জনগণকে যেকোনো মূল্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। 

তিনি জানান, রাষ্ট্রে তাদের সকল প্রকার গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের ক্ষমতা ও রাজনৈতিক চর্চা যদি থাকে ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার মোকাবিলায় জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তিই কিন্তু যথেষ্ট। বিএনপি কিন্তু প্রথম থেকেই জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কথা বলছে যে, অন্তর্বর্তী সরকারের ঘাড়ে বন্দুক রেখে নিজেদের খবরদারি বহাল রাখতে চায়। কিংবা প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্নভাবে ফায়দা হাসিল বা নিজেদের আখের গোছাতে চায় তাদেরকেই আমরা দেখছি 
সুকৌশলে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যাপারে বাধার সৃষ্টি করছে। এই কথা বিভিন্ন জায়গা থেকে সামনে আসছে।

তিনি বলেন, দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে জনগণের কাঁধে একটি ফ্যাসিবাদী অপশাসন চেপে বসেছিল। এই শাসনকে সরানোর জন্য শিক্ষক, সাংবাদিক, পেশাজীবী, কর্মজীবী, শ্রমজীবী থেকে শুরু করে দিনমজুর, রিকশা ও ভ্যানচালক, সিএনজি চালিত অটো চালক, ট্রাকের হেলপার বা চালক খেটে খাওয়া সর্বস্তরের মানুষ স্বৈরাচার হটাতে রাজপথে নেমে এসেছিল। 

সারাদেশের অসংখ্য শ্রমজীবী-পেশাজীবী মানুষ অকাতরে জীবন দিয়েছেন দেশকে মুক্ত করার জন্য। এ কথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, জুলাই আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত করার ব্যাপারে শ্রমজীবী-কর্মজীবী ও পেশাজীবী মানুষের অবদান সবচেয়ে বেশি। তারাই বেশি শহীদ হয়েছেন।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শহীদ আবু সাঈদ এবং চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র শহীদ ওয়াসিমসহ ৬ জন শহীদ হয়েছিলেন। সেদিন থেকেই কিন্তু মূলত আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল। ওই ৬ জন শহীদের অন্যতম ছিলেন চট্টগ্রামের ফার্নিচার কর্মী শহীদ ফারুক। তার বিধবা স্ত্রী ও নিষ্পাপ কন্যার একটি বক্তব্য ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে যে, ফারুকের কথা কেউ বলে না। কারণ তার স্বামী ছাত্র ছিলেন না। আমি মনে করি শহীদ ফারুকের স্ত্রীর এ কথার মধ্যেই নিহিত আছে আমাদের প্রচলিত প্রথাগত রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

তারেক রহমান বলেন, শহীদরা শুধু একটি সংখ্যা নয়। একটি প্রাণের সমাপ্তির অর্থ একটি পরিবারের মৃত্যু। একটি স্বপ্ন-সম্ভাবনার অবসান। অথচ আমরা দেখছি- আজকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যেকটি শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। তারা (সরকার) রাষ্ট্র ও রাজনীতি সংস্কার নিয়ে অনেক সময় ব্যয় করছেন, মিটিং করছেন। কিন্তু খুব দুঃখজনক যে, এক বছর হতে চললেও সরকারের পক্ষে শহীদদের তালিকাটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আমার কাছে মনে হয়েছে- এটি করতে না পারলে ভবিষ্যতের ইতিহাসে আমাদের সবার জন্য ব্যর্থতা হিসেবে চিত্রায়িত হবে।

তারেক রহমান বলেন, আমরা অনেককেই দেখি অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব কুক্ষিগত করার জন্য বিভিন্ন ভাবে খুবই তৎপর। কিন্তু শহীদদের তালিকা তৈরির ব্যাপারে এই তৎপরতা থাকলে নিশ্চয়ই এতোদিনে শহীদদের চূড়ান্ত একটা তালিকা তৈরি করতে পারতাম। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সরকারের যেসব কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কতগুলো অগ্রাধিকার বিষয় থাকা উচিত। কেননা, সরকারের রাষ্ট্র মেরামতের তালিকায় নিত্যনতুন বিষয় সংযুক্ত হলে বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আমরা যদি দেখি শিক্ষা সংস্কারের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদেরকে বিস্মিত করেছে। এক বছরেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরানো সম্ভব হয়নি। ক্যাম্পাসগুলোকে অন্ধকারে রেখে পুথিগত সংস্কার দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশ আলোকিত গড়া সম্ভব কি না সেই প্রশ্ন তৈরি হয়।

তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানের কৃতিত্ব কিন্তু কারও একক অবদান নয়। গণঅভ্যুত্থানে সবার অবদান রয়েছে। মানুষ অধিকার আদায়ের জন্যই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন, জীবন দিয়েছেন। আজকে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রতিদিন নতুন নতুন দাবি আসছে। কিন্তু আমরা এসব ডামাডোলের মধ্যেই যেন শহীদদের ভুলে না যাই। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যারা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার বদলে যারা রাষ্ট্র ও সরকারে প্রভাব বজায় রাখতে নানারকম অপকৌশল করছেন তাদেরকে আহ্বান জানাই- দয়া করে শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করবেন না।

তিনি বলেন, শাসক বদলেছে কিন্তু শাসনের চরিত্র বদলায়নি। জনগণের এমন ধারণা সৃষ্টি হলে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে কঠিন সংকট তৈরি হবে। এখন শহীদদের প্রতি ঋণ পরিশোধের পালা। ৭১ সালের স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধে শহীদ ও ২৪ সালে স্বাধীনতা রক্ষার শহীদ কিংবা অন্যান্য সময়ে দেশের জন্য শহীদদের প্রতি আমাদের গভীর ভালোবাসা। জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান শহীদদের নামে করার চিন্তা আমাদের রয়েছে।

বিএসপিপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব কাদের গণি চৌধুরী এবং ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইউট্যাব’র মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের যৌথ পরিচালনায় বক্তব্য দেন বিগত ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন পেশায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গ এবং চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যরা। 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু প্রমুখ। 

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি